সরকারি ক্রয়-নীতিমালায় দরপত্রের মানদণ্ড এখনো স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানি বান্ধব নয় উল্লেখ করে শুধুমাত্র দেশীয় আইসিটি কোম্পানিগুলোর দ্বারা অটোমেশন হলেই তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রবর্তনের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি-উইসিস/WSIS উইনার পুরস্কার-২০২১’ অর্জন বিষক প্রতিক্রিয়ায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেছেন, সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) প্রকল্পটি বিটিআরসি’র তত্ত্বাবধায়নে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি লিমিটেড দেশীয় দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
পুরস্কার প্রাপ্তিতে সিনেসিস আইটি লিমিটেড-কে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, এই পুরস্কার আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্পের সক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক কারিগরি সহায়তা দিতে পারদর্শী। কিন্তু
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এর থেকে অনেক কম জটিল কাজে এখনো দরপত্রের মানদণ্ড এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো সেখানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পায়। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হলেও এই কাজে এখনও দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এ সমস্যার সমাধানে বেসিস সভাপতি ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ ) এর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল মাননান এর সাথে বৈঠকে সরকারি ক্রয়-নীতিমালায় দেশের সফটওয়্যার ও আইটি সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় কোম্পানিসমূহকে অগ্রাধিকার দেওয়া, এ খাতে দরপত্র আহ্বানে নতুন সংশোধিত পিপিআর টেমপ্লেট অনুসরণ করতে বেসিসের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন।
কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে বেসিস-এর প্ক্ষ থেকে সরকারী ক্রয় নীতিমালায় দেশের সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতের স্থানীয় কোম্পানীসমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন টেমপ্লেট প্রণয়নের জন্য এবং এ খাতের জন্য দরপত্র আহবানের নতুন নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেও এখনো ফল পাননি তিনি।
সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, এরইমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সাথে সাক্ষাৎ করে আন্তর্জাতিক/দাতা-সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহে স্থানীয় সফটওয়্যার ও সফটওয়ার পরিষেবা কোম্পানিগুলো যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পায়, সে বিষয়টি বিবেচনা করার জোর দাবি জানিয়েছি। একইসাথে দাতা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহায়তার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহে বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিজিটাল ডিভাইস পণ্য, সফটওয়্যার বা আইটি পরিষেবাকে অগ্রাধিকার প্রদান; ক্রয় প্রক্রিয়ায় যোগ্যতার শর্তাবলীতে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের ৬০ শতাংশের অধিক নিয়োগে কারিগরি বিভাগে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান, মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, আইসিটি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকে স্থানীয় সফটওয়্যার ও সফটওয়ার পরিষেবা কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পায়, সে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করেছি।’
কিন্তু এখনো এসব উদ্যোগের ফল মেলেনি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করবে বাংলাদেশের স্থানীয় সফটওয়্যার ও সফটওয়ার পরিষেবা তথা বেসিস সদস্য কোম্পানিগুলো। শুধুমাত্র দেশীয় আইসিটি কোম্পানিগুলোর দ্বারা অটোমেশন হলেই তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ”
“কেননা সিবিভিএমপি বাংলাদেশের স্থানীয় সফটওয়্যার ও সফটওয়ার পরিষেবা কোম্পানিগুলোর সক্ষমতার একটি প্রতীক। এ ধরনের উদাহরণ আরও অনেক বিদ্যমান। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে দেশীয় আইসিটি কোম্পানির সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে” – যোগ করেন তিনি।