দেশের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় এবং নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ পরিবর্তন করে সময় বৃদ্ধি করার পরিপ্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য একটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বেসিসের বর্তমান নির্বাহী কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাই মহামান্য হাইকোর্টের কাছে অ্যাড-হক (Ad-hoc) কমিটি গঠনের নির্দেশনার আবেদন করে বেসিসের সম্মানিত সাধারণ সদস্য ও এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে গত ০৪/০৫/২০২১ ইং তারিখে ৪৪৮৬/২০২১ একটি রিট আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বেসিসের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সময় বাড়ানোর বিষয়টি কোনো আইনি কর্তৃত্ব ও প্রক্রিয়া ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, বাণিজ্য সংগঠন (DTO)-কে এই রায়ের আদেশ জারি পর থেকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য একটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর। মামলার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এহসানুল কাইয়ুম।
এ প্রসঙ্গে বেসিসের সাধারণ সদস্য এবং এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ বলেন, দেশের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংগঠন ও অ্যাপেক্স বডি হলো বর্তমান বেসিস। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এ সংগঠনটি, ভবিষ্যতেও রাখতে পারবে। এই সংগঠনটিতেই যদি অনিয়ম চলে, তাহলে কেমন হবে! আমাদের প্রিয় সুনামধন্য সংগঠন বেসিসকে অনিয়মের মধ্যেদিয়ে চলতে দেওয়া যায় না। যদিও বেসিসের বর্তমান নির্বাহী কমিটির যথেষ্ট অনিয়ম লক্ষ্যনীয়। যাহা সম্পূর্ণ অবৈধ, বেআইনি ও আইন পরিপন্থি। একের পর এক তাদের (বর্তমান নির্বাহী কমিটি) অনিয়ম ও অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার মনোবৃত্তি ও স্বেচ্ছচারিতাকে আর সামনে এগুতে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, যেকোনো সংগঠনেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সময়মত সংগঠনের AGM (বার্ষিক সাধারণ সভা) আর নির্বাচনের (Election) আয়োজন করা। দেশের সকল সংগঠনগুলোই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেদিয়ে চলে। যেখানে সংগঠনের প্রত্যক সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত, বুদ্ধি ও পরামর্শ দেওয়ার অধিকার পান। নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্যরা তাদের পছন্দনীয় নির্বাহী কমিটি নির্ধারণ করে, এটা তাদের মৌলিক অধিকার। উক্ত মৌলিক অধিকার থেকেও বেসিসের সম্মানিত সদস্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যাহা বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ২৭ এবং ৩১ লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে এটা স্পষ্টই প্রমাণিত যে, বেসিসের বর্তমান নির্বাহী কমিটি তাদের ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য নির্বাচন পিছানোর টালবাহানা করছে, যাহার কোনো বৈধতা নেই।
বর্তমান নির্বাহী কমিটিতে অ্যাসোসিয়েট (Associate) ক্যাটাগরিতে যে নতুন পরিচালক পদে কো-অপ্ট (Co-opt) করে নেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রেও যথাযথ নিয়ম মানা হয়নি।
অনিয়মের পর্যালাচনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, বৈধতা হারানো বর্তমান নির্বাহী কমিটি আর্টিকেলের ১৪.৩, ১৪.৮, ১৪.৮, ১৪.৯, ১৪.১০, ১৪.১১, ১৬.১, ১৬.২, ১৬.৩, ১৬.৪, ১৮.২, ১৮.৪ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, গত ৩১ শে মার্চ, ২০২০ ইং তারিখের পর থেকে বৈধতা হারানো বর্তমান নির্বাহী কমিটি অদ্যাবধি সংগঠন পরিচালনার জন্য যে সকল কার্যকলাপ ও সিদ্ধান্তসমূহ নিয়েছেন তার সবকিছুই অবৈধ ও আইনসম্মত নয় এবং যাহা বাতিলযোগ্য বটে, দাবি করেন তিনি।