বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির উদ্যোগে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাী বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় স্টেম শিক্ষাবিষয়ক তৃতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মশালায় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। এতে স্কুলের শিক্ষকেরাও পর্যবেক্ষক হিসেবে কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির দুইজন প্রশিক্ষক অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে একটি করে নমুণা ক্লাস করান। ক্লাসে বিজ্ঞান ও গণিত পাঠদান আনন্দপূর্ণ ও সহজবোধ্য করতে বাস্তব উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করা হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব ঘটনার সঙ্গে বইয়ের পাঠকে মেলাতে সক্ষম হয়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রধান শিক্ষক আলিমুজ্জামান কিরণ বলেন, আমাদের স্কুলের স্যারেরা এর আগে দুইটি ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যেখান থেকে তারা উপকরণসহ বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে পাঠদান করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। তারা বিষয়গুলো স্কুলের অন্যান্য শিক্ষককে জানিয়েছেন এবং আগামীতে স্কুলের পাঠদানে ধারণাগুলো প্রয়োগ করবেন।
গোদাগাড়ী আলোর পাঠশালা মূলত আদিবাসী ও কৃষক পরিবারের বাঙালি ছেলেমেয়েরা পরে। স্কুলটি প্রান্তিক এলাকায় একমাত্র স্কুল হওয়ায় দূর থেকে অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে। টিলা ও জলা পাড়ি দিয়ে তারা কোভিড পরিস্থিতির আগে দল বেঁধে আসতো। বর্তমানে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে। সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীর একই দিনে স্কুল না থাকায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া ব্যহত হচ্ছে। আগে উপরের শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থী একইসঙ্গে স্কুলে আসতো। বর্তমানে শিশুরা বড়দের সাহায্য নিয়ে স্কুলে আসতে পারে না ৷ এজন্য স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা কর্মশালা পরবর্তী আলোচনায় সকলের জন্য স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জানায়।
গতবছরের মার্চ মাসে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ক্লাসরুমের বাইরে অবস্থান করছে। ফলে প্রান্তিক এলাকায় হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাঠ না শিখে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় বর্তমান ক্লাসের প্রান্তীক যোগ্যতা অর্জন করা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না।
এ অবস্থায় এবছর ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ফেরার পর অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ইএমকে সেন্টার ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে। যেখানে শিক্ষক ও রিসোর্স পার্সনদের সমন্বয়ে দুইটি ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনের লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসের জন্য প্রস্তুত করা। এ জন্য একটি সহজ ও ফলপ্রসূ পাঠদান পদ্ধতি তৈরি করা। যে পদ্ধতিতে শিক্ষকেরা ক্লাসরুমে স্বল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
প্রকল্পটি শেষ হওয়ায় এখন পাঠদান পদ্ধতি প্রয়োগের লক্ষ্যে বর্তমান কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত ভোলা ও কুড়িগ্রামে দুইটি কর্মশালা আয়োজিত হয়। আগামীকাল রাজশাহী ও নওগাঁয় একইরকম দুইটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির স্বেচ্ছাসেবক আহমাদ মুদ্দাসসের ও রাসমান মুবতাসিম স্বর্গ।