দক্ষিণে আরো একটি পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য পদ্মার ওপারে শক্তমাটির জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এ তথ্য জানানো হয়।
বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে দেয়া বক্তব্যে সরকার প্রধান বলেন,‘পরমাণু শক্তি আমরা শান্তির জন্যই ব্যবহার করবো। পরমাণু শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সেটা গ্রামের মানুষের কাছে যাবে। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে।’
এজন্য সুরক্ষার সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে যাওয়ার পর আমরা দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খুঁজছি। দক্ষিণাঞ্চলে শক্ত মাটির জায়গা পাওয়া খুবই কঠিন। তারপরও বিভিন্ন দ্বীপসহ ওই অঞ্চলে জরিপ করছি। আরেকটা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবো, যেখানে ভালো জায়গা পায়। আমার ইচ্ছা, পদ্মার ওপারেও করবো। আশা করি, এ ব্যাপারে কোনও অসুবিধা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘সেখানে যদি আমরা আরেকটা পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারি। তাহলে বিদ্যুতের জন্য আর কোনও অসুবিধা হবে না। তারপরও আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে যাচ্ছি এ জন্য যে, বিদ্যুৎ সুবিধা যেন মানুষ পায় এবং অব্যাহত থাকে।’
পরমাণু বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের জন্য দেশের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে আনবিক কমিশনে কর্মরতদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা রাশিয়াতে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ভারতেও দিচ্ছি। কারণ সেখানে একই রকম আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। আর এখানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের দেশের মানুষ বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা পাচ্ছে।’
পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি যখন রাশিয়ায় যায়, তাদের রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ হয়। তিনি আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করে দেবেন-এ কথাটা বলেন। তাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ হয়।’ তিনি বলেন, ‘সেখানে আমার কতগুলো প্রশ্নও ছিল এর নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কারণ বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব না। আমাদের যে চুক্তি হয়,তাতে এটাও নিশ্চিত করা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবসময় রাশিয়াই করবে।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে আনবিক কমিশনে কর্মরতদের অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়াতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ভারতেও দিচ্ছি। কারণ সেখানে একই রকম আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। আর এখানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের দেশের মানুষ বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা পাচ্ছে।’
রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠান স্থল থেকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেজ ওসমান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রসাটমের প্রধান নির্বাহী আলেক্সি লিখাচোখ ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট গ্রুপ অব কোম্পানীজ এর প্রসিডেন্ট আলেকজান্ডার লকসিন।
এছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের এই প্রকল্পের প্রায় ৯০ ভাগ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট।
২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ও ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।